নিজস্ব সংবাদ দাতাঃ ২৮ জুন কলকাতার লাউডন স্ট্রীটে ইনস্টিটিউট অব হিস্টোরিক্যাল স্টাডিসের সভাগৃহে আই এন এ ও নেতাজীকে নিয়ে বসেছিল সেমিনার৷ রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাবিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক গবেষক ও শিক্ষক সভায় যোগ দিয়েছিলেন মহা উৎসাহে৷ আই এন এ ও নেতাজী বিষয়ে এতদিন যে গবেষনা হয়ে এসেছে এবার শোনা গেল অনেক গুলি নতুন কথা৷ সেমিনারের শুরুতে ইনসটিটিউটের সদ্য প্রয়াত ডিরেক্টর অধ্যাপক চিত্তব্রত পালিতের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর সভার সূচনা করেন ইনসটিটিউটের ডিরেক্টর অধ্যাপক উজ্জ্বল রায়৷ উদ্বোধনী ভাষনে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড: অনিল কুমার সরকার “ নেতাজী ও আই অন এ র’ অবদান বিষয়ে আলোকপাত করেন৷সভার মূল বক্তব্য্ পেশ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসর পরাপত অধ্যাপক, বতর্মানে অনারারি অধ্যাপক ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পারকতন উপাচারয্য্ রন্জন চক্রবতী৷ বাংলার নবজাগরনের বিভিন্ন মনীষীদের চিন্তায় ও সেই সঙ্গে নেতাজীর চিন্তায় “এশিয়ালিজমের’ গুরূত্তের বিষয়ে আলোচনা করেন৷

সেমিনারের প্রথম পর্বে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সাহারা আহম্মেদের সভাপতিত্ত্বে আলোচ্য বিষয়ের ওপর গবেষণা পত্র পেশ করেন যথাক্রমে কল্যাণী বিশ্ব বিদ্যালয়ের নেতাজী গবেষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুমিত মুখার্জী, রাণী বিড়লা কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডঃ রমা ব্যানার্জী, বিশ্ব ভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ডঃ সব্যসাচী দাসগুপ্ত প্রমুখ৷ সুমিত মুখার্জীর পেপার থেকে জানা গেল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ১৯৪৩ সালের ২১ অকটোবর পূর্ব এশিয়ায় স্বাধীন আজাদহিন্দ ভারত সরকার গঠন করার সময়েই তাঁর প্রশাসনকে বহু ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভাগে একজন করে উপযুক্ত বিভাগীয় প্রধানকে বসিয়ে দিয়েছিলেন৷ কি না ছিল ওই সব ছিল ওই বিভাগুলিতে৷ ছিল যেমন প্রচার বিভাগ, নিয়োগ ও ট্রেনিং বিভাগ, শিক্ষা–সংস্কৃতি স্বাস্থ্য অর্থ কর ও কল্যানকর দপ্তর এমনকি বিশেষ আই বি ডি আই, বি সি আই ডি ও গোপনীয় বিভাগও৷ স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্র প্রধান সুভাষ চন্দ্র বোস, প্রধান মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রীর দ্বয়িত্ব নিয়েছিলেন নিয়েছিলেন নিজের শক্ত কাঁধে৷, মহিলা সংগঠনের দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন ক্যাপটেন লক্ষী সাইগল, প্রচার ও ব্রডকাস্টিং মন্ত্রীত্বের দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন এস এ আইয়ার, কর্ণেল এ সি চ্যাটার্জির ওপর দ্বায়িত্ব ছিল অর্থ দপ্তরের৷ অধ্যাপক সুমিত মুখার্জীর দাবী সুভাষ চন্দ্র বোসের এই প্রশাসনিক বিভাজন সেই বিতর্কের নিরসন করবে যেখানে জিজ্ঞাসার চিহ্ণ প্রায়ই উঠে আসে নেতাজী তাঁর অভিযানে সফল হলে স্বাধীন ভারতে তাঁর সরকার স্বৈরতান্ত্রিক না গণতান্ত্রিক হতো৷ ডঃ রমা ব্যানার্জী তাঁর গবেষনা পত্রে শোনালেন নেতাজী আজাদ হিন্দ ফৌজে নারী বাহিনী গঠনই নেতাজীর প্রথম পরিকল্পনা নয়৷ নারীবাহিনী গঠন করেছিলেন তিনি ১৯৩৮ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনের প্রাক্কালে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স ফোর্সের অঙ্গ হিসাবে৷ ওই সময় ওই বাহিনীর দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি অরবিন্দ ঘোষের ভাইঝি লতিকা ঘোষের ওপর৷ রমা ব্যনার্জী জানালেন বিশ্বে প্রথম যুদ্ধে নারীবাহিনীর প্রবর্তক সুভাষ বোসের হাতে গড়া রানি ঝাঁন্সি রেজিন্টের সদস্যরা যাঁরা যৌবনে সমস্ত রকম সুখ ত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য সবকিছু ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা মিত্র শক্তির হাতে বন্দি হয়ে ভারতে এলে নেহেরু সরকার তাঁদেরকে কোন সম্মান দেননি এমনকি ভারতের নাগরিকত্ত্বও তাঁদেরকে দেওয়া হয়নি৷ দেওয়া হয়নি কোন পেনশন বা স্বধীনতা সংগ্রামীর স্বীকৃতির পুরস্কার ৷ সবথেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন মালয়েশিয়া থেকে আগত ঝাঁন্সি রেজিমেন্টের রাণীরা ৷ বহরমপুরের ভূমিপুত্র রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অনিরূদ্ধ দাস জানালেন হে-হিটলার সুভাষ বোসকে একেবারেই সাহায্য করেন নি এ কথা ঠিক নয়৷ ন্যাতসি জোটের নেতা হিসাবে তিনি জাপানের প্রধান মন্ত্রী তোজোর থেকে সুভাস বোসকে সর্বোত ভাবে সাহায্য নিতে পরামর্শ দিয়ে জার্মানীর অতি উন্নত সাবমেরিন দিয়ে সুভাষকে ভাল ভাবে জাপান পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন৷ হায়দ্রাবাদে জন্ম জার্মানীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত আবিদ হাসান সাফরানি সুভাষের আহ্বানে সর্বত্যাগি হয়ে ফাইনাল পরীক্ষার সামান্য পড়াশুনা বাকি থাকতেই সুভাষের ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনে যোগ দেন৷ ক্রমে আবিদ সুভাষের ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে ও আই এন এ-র গান্ধী ব্রিগেডের নেতৃত্বের পদে থেকে তাঁর অবদান রাখেন৷ সুভাষ বাহিনীর কমরেড দের সঙ্গে দেখাহলে অভিবাদনের মাধ্যম হিসাবে ‘জয় হিন্দ’ শব্দ বন্ধটি তিনিই চালু করেছিলেন৷ জনগণ মন অধি নায়ক র হিন্দি “শুভ সুখ’ রচনায় তাঁরও অবদান ছিল৷
নেতাজী গবেষণার এই রকম বহু অনালোচিত বিষয় উঠেএসেছিল সেদিন ওই সেমিনারে৷
সঙ্গের ছবিটি ‘NETAJI’ A Pictorial Biography, Edited by Sisir Kumar Bose & Birendra Nath Sinha এঁর গ্রন্থ থেকে নেওয়া৷