লর্ড কার্জনের মৃত্যু শতবর্ষে – ইতিহাস পরিক্রমার প্রতিবেদন

যে শিক্ষকের হাত ধরে আমরা ঐতিহ্যকে ভালবাসতে শিখেছি- যিনি শিখিয়েছেন ঐতিহ্যই আমাদের পরিচয়, যাঁর স্বপ্নের আলোয় এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধুমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে উত্তোরিত হয়ে প্রকৃত গবেষণা কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছিল, যাঁর উদ্যোগে ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দের ১ জুন অসমের কাজিরাঙায় ১২০ বিঘে জমি সংরক্ষিত হয়ে ওই সংরক্ষিত ভূমিতেই তৈরি হয়েছিল ভারতের গর্ব একশৃঙ্গী গন্ডারের অভয়ে বিচরণ ভূমি কাজিরাঙা জাতিয়উদ্যান, যাঁর বাধা প্রদানে পৃথিবীর সর্বকালের সেরা বিশ্ময় সপ্তম আশ্চর্য আগ্রার তাজমহল টেন্ডার হয়েও তা ভেঙে, ভাঙা মার্বেল পাথরের দরে বিক্রি হয়ে যায়নি, যিনি এদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য সংরক্ষণ করতে শুধু আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার শীর্ষপদে জন মার্শালকেই বসাননি সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে পৌরচেতনা বাড়াবার উদ্যেশ্যে তাঁর সময় কালে এই বিষয়ে সত্তরটিরও বেশী জন সভায় ভাষণ দিয়েই শুধু ক্ষান্ত হননি, কার্যকরী উদ্যোগ নিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন “ দ্য এনসিয়েন্ট মনুমন্টেস্ প্রিজারভেশন এ্যাক্ট – ১৯০৪ ’, যাঁর প্রশাসনিক কার্য্যকারীতায় পরোক্ষে এ দেশের জাতীয়তা বোধের পালে সুনামির হাওয়া লেগেছিল সেই দূরদর্শী প্রশাসক লর্ড কার্জনের মৃত্যু শতবর্ষ পেরিয়ে গেল এই সেদিন ২০ মার্চ নিরবে নিভৃতে৷
আর আমরা যারা বিগত প্রায় শত বর্ষ ধরে শুধু একপেশে চিন্তায় বিচারে তাঁর অন্যান্য অজস্র সদর্থক কার্যাবলিকে অস্বীকৃতির অন্ধকারে ঠেলেদিয়ে – তাঁর দেবতুল্য মহিমাকে কলঙ্কিত করে তাঁর জীবনটাকেই করে তুলেছি আমাদের সকলের কাছে ব্রাত্য – বিচার করিনি প্রকৃতর তুলাদন্ডে তাঁর অজস্র গুনাবলি এমনকি নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক চিন্তাকে বরং করেছি পদ দলিত উগ্র জাতিয়তাবাদের ঝাঁঝে অজস্র প্রগতিশিল চিন্তার কষ্টিপাথরে যাচাই হয়ে মশ্রিন হয়ে উঠিনি ৷ তাঁদের মধ্যে কেও কেও অতিশয় দুর্বলতা নিয়েও অন্তত একবারের জন্যেও জ্বলে ওঠার চেষ্টা করেছি – সেই ক্ষীণকণ্ঠের অনুরনণ যুগ যুগ ধরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি – তাঁদের প্রতিবাদি কন্ঠ স্তব্ধ না হয়ে যাওয়ার এই প্রয়াসের সামিল হয়েছি তারাই কলম ধরেছি সেই মহামানবের মহান কার্যাবলির পুণর্মূল্যায়ন করতে৷
জর্জ নাথানিয়েল কার্জন জন্মগ্রহণ করে ছিলেন ১৮৫৯ খ্রীস্টাব্দের ১১ জানুয়ারি , ডার্বিশায়ারে ৷ মৃত্যু ১৯২৫ খ্রীস্টাব্দের ২০ মার্চ লন্ডনে ৷ তাঁর প্রায় পঁয়সট্টি বছরের জীবনে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মাত্র চোদ্দ বছরের৷ এই চোদ্দ বছরের সম্পর্কই “এই ভারতের মহামানবের” অন্ত সলিলা শক্তির আকর্ষনে এই দেশটা হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে পিতৃভূমি৷ তাইতো “প্রাচীন ঐতিহ্য”ই যে এদেশের জনমনের সঠিক পরিচয় এই নিগুঢ় সত্য উপলব্ধি করাতে তার অতুলনীয় প্রচেস্টার অন্ত নাই৷ জনচেতনা বাড়াতে এদেশের মহানগর থেকে গণ্ডগ্রামের প্রান্তর পর্যন্ত যিনি ছুটে বেড়িয়ে একেবারে তৃণমূলে স্তরে পৌঁছে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ঐতিহ্যের নিদর্শনও রক্ষা করতে যিনি একালের রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের মতো ষ্ট্রীট কর্ণারিং এর ধরনে প্রায় পৌনে শতাধিক জনসভায় ভাষণ দিয়ে আমজনতাকে সচেতন করেই ক্ষান্ত হননি কেন্দ্রীয় প্রত্নতত্ব সর্বেক্ষণের মতো সংগঠনকে শক্ত সমর্থ করে গড়েতুলতে তার মাথায় বসিয়ে দিয়েছিলেন জন মার্শালের মত করিতকর্মা নিপুন আধিকারিককে৷ অক্সফোর্ড ইউনিভারসিটি থেকে পড়াশুনা সাঙ্গ করে নাথালিয়ান কার্জন বৃটিশ সরকারের বিদেশ দপ্তরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন৷ ১৯১৫ থেকে ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত কাজ করেছেন ব্রিটিশ সরকারের বিদেশ সচিব হিসাবে৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ ও পূর্বের দেশগুলির সমস্যাসংকুল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷
প্রাচীন স্থাপত্য শৈলির পাদপীঠ অক্সফোর্ড ইউনিভাসিটির ছাত্র কার্জন ১৮৮০–র দশকের মধ্যবর্তী সময়ে লর্ড সলস্বেরীর সঙ্গে পরিচিত হন৷ তাঁর প্রভাবেই ১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন তিনি৷ ১৮৯১ খ্রীস্টাব্দে হন ভারতে আণ্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট, ১৮৯৫ খ্রীস্টাব্দে ঐ সঙ্গেই হন প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ৷ ঐ বছরই ২২ এপ্রিল তিনি মেরী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন৷ এর তিন বছর পর তাঁকে কেওলেস্থনের ব্যারণ কার্জন উপাধি দেওয়া হয়৷ ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দে হন ভারতে ভাইসরয় বা গভর্ণর জেনারেল ৷ ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে পূর্ববঙ্গে তাঁর বিনা অনুমতিতে জনতার উপর গুলি চালনাকারী এক সেনা অফিসারের সঙ্গে মতানৈক্য হলে এবং ব্রিটিশ সরকার কার্জনের মত গ্রহণ করে ওই সেনা অফিসারকে বরখাস্ত না করায় অপমানিত কার্জন ভারতের গর্ভনর জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন৷ কিছুদিনের জন্য রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে লর্ড কার্জন অক্সফোর্ডের চ্যান্সেলার হিসাবে কাজ করেছিলেন৷ওই সময়ে কার্জন পুরাতন দুর্মূল্য দ্রব্য ও ঐতিহ্যশালী বাড়ি সংরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷১৯১১ খ্রীস্টাব্দে তিনি আর্ল নির্বাচিত হন, এবং হাউস অব লর্ডসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন৷১৯১৫ খ্রীস্টাব্দের পর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানাধিকার করে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশনীতি পরিচালনা করেন৷ যুদ্ধের পর ১৯২৪ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বিদেশ সচিব হিসাবে কাজ করেছিলেন৷ প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯১৭ খ্রীস্টাব্দের ২ জনুয়ারী তিনি মিসেস আলফ্রেড (গ্রেস) ডাগন নামে এক বিধবা অমেরিকান মহিলাকে বিবাহ করেন৷ প্রথম স্ত্রীর গর্ভে তাঁর তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে৷ ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ২০ মার্চ প্রয়াত হন লর্ড কার্জন৷ তাঁর বর্ণময় জীবনের বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য লর্ড কার্জন ভারতের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন৷ ঐতিহাসিক স্মৃতি স্তম্ভগুলি সংস্কার ও উদ্ধার করার জন্য তিনি যেমন আইন প্রণয়ন করিয়েছিলেন, তেমনি এদেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি সংস্কারের জন্য তিনি পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড প্রদান করেছিলেন৷ বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার যাতে অজন্তা ইলোরার গুহাচিত্র বা সাঁচী স্তুপের মতো ঐতিহ্য মণ্ডিত স্থাপত্য সংরক্ষণের জন্য তৎপর থাকেন তার জন্য তিনি সব সময় নির্দেশ দিতেন ৷ প্রাদেশিক সরকার গুলিকে মিউজিয়াম স্থাপন করে প্রাচীন প্রত্নবস্তুগুলি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকরী করার ব্যবস্থা করতেন ৷গভর্নর জেনারেল হিসাবে তিনি প্রথমেই মালদহের গৌড় পরিদর্শন করেছিলেন৷ মুর্শিদাবাদ পরিদর্শন করার সময় আর্ল কার্জন সুবা বংলার পুরাতন রাজধানী হুমায়ূন মঞ্জিল বা ফিন্ডেলবাগে গিয়ে সুবাদার শাহ সুজা নির্মিত কষ্টিপাথরের মহামূল্য সুবাবাংলার মসনদে উপবেশন করে তৎকালের মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর আলী কাদেরের কাছ থেকে ওই মসনদ গ্রহণ করে রাজধানী কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কার্জনের ইচ্ছা ছিল রাজধানি কলকাতার মিউজিয়ামে ওই মসনদ সংরক্ষিত হবে৷ অবশেষে লর্ড কার্জন – পরিকল্পিত সাদা মার্বেল পাথরে নির্মিত ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধে সংরক্ষিত হয় শাহসুজা নির্মিত কষ্টি পাথরের ওই সুবাবাংলার মসনদ৷ পূরন হয় কার্জনের ইচ্ছা৷
সুবা বাংলার মসনদ সংরক্ষনে লর্ড কার্জন
১৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট শাহ্জাহানের দ্বিতীয় পুত্র বাংলা সুবার দশম সুবাদার শাহশুজা রাষ্ট্রের বা রাজ্যের প্রতিনিধির উপবেশনের জন্য বানিয়েছিলেন সুবাদার মানসিংহ নির্মিত রাজমহলের রাজধানীর সঙ্গে মানানসই বাংলা সুবাহর সিংহাসন বা ( মসনদ)৷ সম্ভবতঃ সিংহাসন নামক প্রতীক সম্বন্ধে দেশের জনমনের আকর্ষনকে মর্যাদা দিতেই শাহ শুজার ছিল ওই প্রচেস্টা৷ শুজার সময় থেকে ওই মসনদ রক্ষিত হয়েছিল তৎকালীন বাংলার রাজধানী জাহাঙ্গীর নগর বা ঢাকায় ৷ পিতা শাহজাহান ময়ূর সিংহাসনে বসে ভারত সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছর ৷ আর পুত্র শুজাও বাংলার ওই মসনদে বসে রাজত্ব চালিয়েছেন পিতা শাহজাহানের মতই দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছর ৷ পিতা ও পুত্রের ভাগ্য বিপর্যয়ও ঘটেছিল প্রায় একই সঙ্গে৷ শাহজাহান ময়ূর সিংহাসন থেকে চ্যুত হয়ে পুত্র আরঙ্গজেবের হাতে বন্দি হয়ে ছিলেন ১৬৫৮ সালের শেষের দিকে আর শুজা রাজধানী ঢাকা থেকে মসনদ চ্যুত হয়েছিলেন আরঙ্গজেবের সেনাপতি মীরজুমলার সঙ্গে খাজুয়ার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে৷ রাজমহল থেকে পলাতক শুজাকে ঢাকা থেকে বিতাড়ন করেন আরঙ্গজেবের সেনাপতি মীরজুমলা ( মে, ১৬৬০ )৷ ঐ বছরই জুন মাসে সম্রাট আরঙ্গজেবের ফরমানে বাংলার সুবাদার হন মুঘল সেনাপতি মীরজুমলা৷
শাহ শুজা নির্মিত ওই সিংহাসন বা মসনদ সত্যিই একদিন সুবাহ্ বা রাজ্যের প্রতীক হয়ে উঠে ছিল ৷ শাহ জাহান যখন পিতা ভারত সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে সুবাহ বাংলার পুরাতন রাজধানী রাজমহল অধিকার করে নেন তখন বাংলার সুবাদার ইব্রাহীম খান সম্রাট ও প্রভু পুত্রের এই আচরনে প্রথমে বড়ই অস্বস্তিতে পড়েন৷ শাহজাহান অতঃপর রাজধানী জাহাঙ্গীর নগর বা ঢাকা নগরী দখল করতে অগ্রসর হলে ইব্রাহিম খান শাহজাহানের গতিরোধ করেন৷ইব্রাহিমখানের সঙ্গে শাহজাহানের যুদ্ধ বেধে যায় এবং ঐ যুদ্ধে ইব্রাহিম খান পরাজিত ও নিহত হলে শাহজাহান রাজধানী অধিকার করে নেন৷ এর থেকে যেমন প্রতিয়মান হয় রাজধানী হচ্ছে সাম্রাজ্যের প্রতীক ৷ তেমনি মীরজুমলা দিল্লির সিংহাসনে উপবিষ্ট স্বঘোষিত সম্রাট আরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৫৯ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলার সুবাদার শাহশুজাকে খাজুয়ার যুদ্ধে পরাস্ত করেই ক্ষান্ত হননি ১৬৬০ সালের মে মাসে রাজধানী জাহাঙ্গীর নগর বা ঢাকা নগরী দখল করে শুজাকে তাড়িয়ে শাহ্ শুজা নির্মিত (১৬৪৩) ঐ মসনদে উপবেশন করেছিলেন৷ এর থেকেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে মুঘল যুগে রাজ্যের অন্যতম পাঁচটি লক্ষণ ছিল নির্দ্দিষ্ট ভূখন্ড, নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক প্রজাকুল, সম্রাটের ফরমান বা লিখিত দলিল, রাজধানী ও সিংহাসন বা মসনদ৷ ৷
মীরজুমলার মৃত্যু হয় ১৬৬৩ সালের মার্চ মাসে৷ আর তাঁর মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর ১৬৬৪ সালের মার্চ মাসে বাংলা সুবাহ সুবাদার হন শায়েস্তা খাঁ৷ বাংলা নাম ‘সিংহাসন’ এক সময় পারস্য বাসীদের কাছে ‘মসনদ’ নামে রূপান্তরিত হয়েছিল৷ বাংলা, বিহার, ওড়িশা বা বাংলা সুবাহর সুবাদার হয়ে এসেছিলেন ভারত সম্রাট শাহজাহান পুত্র শাহশুজা৷ শাহশুজা বিহারের মুঙ্গের প্রদেশের বোখাড়ার অধিবাসী খাজা নজরকে দিয়ে ১৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে সুবাহ বা রাজ্যের প্রতীক এর জন্য বানিয়েছিলেন সুবা বাংলার সুবাদারদের উপবেশনের জন্য এক খণ্ড বৃহৎ পাথর কেটে সিংহাসন বা মসনদ৷ শুজার আমল থেকেই ওই সিংহাসনটিই সুবা বাংলার মসনদ বা সিংহাসন৷ কালো কষ্টি পাথরের ১৮ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৬ ফুট ব্যাসের ঘনত্ব বিশিষ্ট এক খন্ড পাথর কেটে তৈরী ঐ মসনদের চারটি স্তম্ভ আলগা না বসিয়ে বৃহৎ ঐ একখন্ড পাথর কেটেই তৈরী হয়েছিল৷ মসনদটিতে আছে ১৬টি মুখ, এবং একটি মুখে ফারসীতে খোদাই করা কিছু লিপি৷ ফারসী ভাষায় লেখা আছে “ Taiar shud Takt Mobarak batarikh bistohaftum shahere Shaban- Ul- Moazzam 1052 bai ehtemam Kumtaneen banda Khaja Nazar Bokhari fimokam Monghyr Munsebe Behar. ” যার অর্থ ‘‘এই মাঙ্গলিক সিংহাসন ১০৫২ হিজরীর ২৭ শে সাবান বিহার প্রদেশস্থ মুঙ্গের নগরে বোখরাবাসী দাসানুদাস খাজা নজর কর্তৃক নির্মিত হইল৷’’ হিজরী অব্দের ১০৫২ সংখ্যার শেষের সংখ্যাটি অষ্পষ্ট থাকায় পন্ডিতেরা কেউ বলেছেন ওইটি সংখ্যা ২ কেউ বলেছেন ৪ ৷ ব্রেভারিজের হিসাবে সুবা বাংলার ঐ মসনদটি তৈরী হয়েছিল ১৬৪১ খ্রীষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর৷ কিন্তু পি. সি মজুমদার জানাচ্ছেন সেটি তৈরী হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে৷ পি. সি মজুমদার তাঁর মসনদ অব্ মুর্শিদাবাদ গ্রন্থে ইংরাজী অনুবাদ করেছেন এইভাবে ––“ this auspicious throne was made at Monghyr in Behar by the humblest of slaves, Khaja Nazar of Bokhara,on the 27th Shaban,1052 H.”(1643). ঐ কষ্টি পাথরে তৈরী মসনদের নিকটেই ছিল কয়েকটি ছিদ্র৷ ঐ ছিদ্রে খুব সরু স্টিকের থাম বসিয়ে মুঘল রীতিতে টাঙানো হতো সামিয়ানা৷ মসনদটির উপরেও দেওয়া হতো মোটা তোষকের গদি ও গালিচা৷ মসনদ অব মুর্শিদাবাদ লিখেছে “ There are some holes near the edge of the throne for the insertion of poles for the support of a Canopy. ” শাহসুজা(১৬২৯ – ১৬৬০) থেকে পরবর্তী বাংলার সুবাদাররা উপবেশন করেছেন ঐ মসনদে৷ এমনকি বসেছেন মীরজুমলা ( ১৬৬০ – মার্চ, ১৬৬৩ ) ,শায়েস্তা খাঁ (মার্চ, ১৬৬৪ – জুন , ১৬৮৮ ) , খান – ই– জাহান ( এক বৎসর ) , আজিমুনসান ( ১৬৬৯ – ১৭১২ ) এবং মুর্শিদকুলী খাঁ ( ১৭১৭ – ১৭২৭ ) ও পরবর্তী সুবাদারেরা এমনকি ভারত সম্রাটের কাছথেকে ১৭৬৫ খ্রীস্টাব্দে বংশানুক্রমিক দেওয়ানী ইজারা নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রতিনিধি লর্ড ক্লাইভ, ভেরেলেস্ট প্রমুখেরা৷ ইতিহাস প্রসিদ্ধ সুবা বাংলার ওই মসনদ লর্ড কার্জন নিয়ে যান কলকাতায়৷ তাঁর ইচ্ছাছিল কলকাতার যাদুঘরে রক্ষিত থাকবে ওই মসনদ৷ ভারত সম্রাট শাহজাহান যেমন ভেবে ছিলেন শ্বেত শুভ্র মর্মর প্রস্তরে সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের বিশ্বসেরা স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার কথা তেমনি প্রায় তিনশো বছর পর ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন ভারত সম্রাটের অনুকরনে শ্বেত শুভ্র মর্মর প্রস্তরে এক বিষ্ময় স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলবেন তৎকালের ভারতের রাজধানী কলকাতায় বিশ্ব সম্রাজ্ঞী মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে৷ অবশেষে কার্জন পরিকল্পিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দরবার হলে সুবাবাংলার মসনদের মর্যাদার সঙ্গে স্থান হয়ে যায়৷
মুর্শিদাবাদ ভ্রমন কালে কার্জন জগৎ শেঠদের মহিমাপুরের প্রাসাদে যান এবং ওই প্রাসাদ অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলার শেষ স্বধীন রাজা লক্ষণ সেনের সিংহাসন অবলোকন করে সেটিকেও রাজধানী কলকাতায় নিয়ে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন৷ ওই সিংহাসনে দেব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে বলে জগৎশেঠরা ভিন্নমত পোষন করলে কার্জন তাঁর নিজের ক্যামেরায় ওই সিংহাসনের ছবি তুলে রেখে ছিলেন বলে জানাচ্ছেন জে. এস. লিটিল তাঁর হাউস অব জগৎশেঠ গ্রন্থে৷ প্রায় শতবর্ষ পরে জগৎশেঠদের পরিবার ধ্বংসন্মুখ হলে ১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দে ওই লক্ষণ সেনের সিংহাসন চুরি হয়েযায়৷ স্থানীয়ও বাসিন্দারা অভিযোগ জানান মুর্শিদাবাদ থানায় কিন্তু এ্যান্টিকুইটিস চোরা চালানের স্বর্গরাজ্য বলে কথিত মুর্শিদাবাদের ওই স্থান থেকে চুরিযাওয়া লক্ষণ সেনের সিংহাসন আজও উদ্ধার হয়নি৷ সুবা বাংলার মসনদের মতো লক্ষণ সেনের সিংহাসনটিও যদি কার্জন কলকাতায় নিয়ে যেতে পারতেন তাহলে স্বাধীন বাংলার শেষ নৃপতি লক্ষণ সেনের শেষ স্মৃতি টুকু অন্তত বেঁচে থাকেতো৷
তাজমহল সংরক্ষণে লর্ডকার্জন
লর্ডকার্জন যে সময় ভারতের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন তারও প্রায় তিনশো বছর পূর্বে ভারত সম্রাট শাহজাহান ভারতের রাজধানী অগ্রায় সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগমের সমাধিসৌধ নির্মাণ করেছিলেন আগ্রা থেকে প্রায় সহস্র মাইল দূর থেকে শ্বেত শুভ্র মার্বেল আনিয়ে বিশ্বের বিষ্ময় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য তাজমহল৷ প্রায় তিনশো বছরপর ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড কার্জন সম্রাট নির্মিত তাজমহলের ত্রুটি মুক্ত সাদা মার্বেলের এক স্মৃতিসৌধ গড়তে পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর সময়ের ভারতের রাজধানী কোলকাতায় বিশ্ব সম্রাজ্ঞী মহারানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে৷ কার্জনের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছিল৷ এ দেশের ঐতিহ্য বাহী স্থাপত্য গুলিযে ভারতবাসীর পরিচয় তা লর্ডকার্জন মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন৷ এদেশের প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলি সংরক্ষণের তাগিদে লর্ড কার্জন ভারতবর্ষের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত হন্যে হয়ে ছুটে বেড়িয়ে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র স্থাপত্য গুলিকেও সংরক্ষণ করতে যেমন জন চেতনা বাড়াতে সচেষ্ট ছিলেন তেমনি ওই সব স্থাপত্য সংরক্ষণ করতে প্রদেশিক প্রশাসকদের নির্দেশ দিতেন৷ তাজমহলযে, তাঁর আগের গর্ভনর জেনারেল ভাঙা মার্বেলের দরে বিক্রি করেদেওয়ার জন্য টেণ্ডার করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর হস্তক্ষেপেই যে ওই টেণ্ডার কার্যকরি হয়নি তাও কার্জন তাঁর ১৯০০ খ্রীস্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারী কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সভায় যে বক্তৃতা লর্ড কার্জন দিয়েছিলেন তাতে দ্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, How little the leaven had permeated the lump, and how strongly the barbarian still dominated the aesthetic in the official mind, may be shown by incidents that from time to time occurred.In the days of Lord William Bentinck the Taj was on the point of being destroyed for the value of its marbles. The same Governor General sold by auction the marble bath in Shah Jehan’s Palace at Agra, which had been torn up by Lord Hastings for a gift to George IV , but had somehow never been despatched. In the same regime a proposal was made to lease the gardens at Sikandra to the Executive Engineer at Agra for the purpose of speculative cultivation. In 1857, after the Mutiny, it was solemnly proposed to raze to the ground the Jumma Musjid at Delhi, the noblest ceremonial mosque in the world, and it was only spared at the instance of Sir John Lawrence. As late as 1868 the destruction of the great gateways of the Sanchi Tope was uccessfully prevented by the same statesman”. শুধু তাই নয় সাত বছর ভারতের গভর্নর জেনারেল থাকা কালে ভারতের ঐতিহ্য, স্থাপত্য সংরক্ষণ, পৌরপরিষেবা ইত্যাদি বিষয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অন্তত একাত্তরটি সভায় ভাষন দিয়ে ঐ সকল বিষয়ে এদেশের মানুষের জনচেতনা বাড়াবার চেষ্টা করে ছিলেন তিনি৷ কার্জন বুঝেছিলেন শুধুমাত্র জনচেতনা বাড়ালেই বা প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মত সংগঠন গড়ে তুললেই হবে না৷ প্রয়োজন প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত আইনের৷ তাই লর্ড কার্জনের সুপারিশেই এবং উদ্যোগে ‘দ্য এনসিয়েন্ট মনুমেন্টস্ প্রিজারভেশন এ্যাক্ট–১৯০৪’ প্রবর্ত্তন হয়েছিল৷
পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিষ্ময় তাজ মহলকে লর্ড কার্জন এতটায় ভাল বেশেছিলেন যে, তাঁর সময়ের অধিকাংশ পূর্ণিমা ও অমাবস্যার রাত্রে রাজধানী কলকাতা থেকে সুদূর আগ্রা গিয়ে তাজমহল দেখতেন আর শুধু দেখতেন৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও তাঁর বিখ্যাত শাহজাহান কবিতায় তাজমহলের বর্ণনা দিতে কার্জনের মতো অতবার তাজমহল দেখেননি৷ লর্ড কার্জনের কবি মন তাঁর অন্তরাত্মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করেছে “সম্রাট কবি শাহজাহান’ জ্যোৎস্না রাতের আগ্রার তাজমহলের সুষমা যে অমাবস্যার রাতে অন্ধকারের চাদরে ঢাকা পরেযায় ওই কালিমা নিরসনের ব্যবস্থা তো “সম্রাট কবি’ করে যাননি৷ অমাবস্যার রাতে তাজমহলকে আলোকিত করার দুর্নিবার কল্পনা কার্জনকে তাঁর আকাশ প্রমাণ টেনসনের দুর্দিনেও ম্লান হতে দেয়নি৷ বঙ্গ ভঙ্গ প্রস্তবের সময়ের ওই দুর্বার আন্দোলনের দিনেও কার্জনের মাথা থেকে অমাবস্যার রাতে তাজমহলকে পূর্ণিমার রাতের জ্যোৎস্নায় সুষমা মণ্ডিত দেখতে চেয়েছিলেন লর্ড কার্জন৷ তাজমহলের গর্ভগৃহে লাগানোর জন্য তিনি মুঘোল রীতির ঝাড়- বাতি খুঁজেছেন সাড়াবিশ্ব জুড়ে৷ তাঁর ইচ্ছা আগ্রা দুর্গের প্রাকার থেকে পূর্ণিমার রাতে তাজমহল দেখে পুলকিত হয়েছেন “সম্রাট কবি’ কিন্তু অমাবস্যার অমানিশা যখন তাজকে গ্রাস করত জ্যোৎস্নারাতের সুষমা যখন অমানিশার গ্রাসে বিলিন করেদিত তাজকে তখন সম্রাটের কবিমনে যে হাহাকারের ব্যঞ্জনা তৈরী হতো তা অন্তরে অন্তরে উপলব্ধি করেই লর্ডকার্জন বিশ্ব তোলপার করে খোঁজ করেন মোঘল রীতির ঝাড় বাতি যা আলোকিত করবে অমাবস্যার রাতে তাজমহলকে৷ সেদিনের কথাকি আমরা মনে রেখেছি – গভর্ণর জেনারেলের কাছে অনুমতি না নিয়েই এক সেনা অফিসার গণআন্দোলনের ওপর গুলি চালালে তার প্রতিবাদে কার্জন বৃটিশ সরকারের কাছে ওই সেনা অফিসারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেন ৷ সেনা অফিসারকে বরখাস্ত করলে সেনার মধ্যে অসন্তোষের গুমোট বারুদের মতো বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কায় বৃটিশ সরকার কার্জনের সুপারিশ মেনে না নিলে উচ্চ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লর্ড কার্জন গভর্ণরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যখন জাহাজে লণ্ডনে গৃহাভিমুখে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সেই সময় সংবাদ আসে – অমাবস্যার রাতে তাজমহলকে পূর্ণিমার সুষমা মণ্ডিত জ্যোৎস্নার আলোক ধারায় স্নাত করাবার মোঘল রীতির ঝার-বাতি মিলতে পারে কায়রোর এক কারখানায়৷ সংবাদ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কার্জনের সিদ্ধান্তে লণ্ডনের দিক থেকে জাহাজের মুখ ঘুরেযায় কায়রোর দিকে৷ কায়রোয় পৌঁছে সেই কারখানায় মিলে যায় লর্ডকার্জনের তাজমহলকে অমাবস্যার রাত্রে আলোকিত করার স্বপ্ন মোঘল ঘরানার সেই ঝার বাতি৷ মূল্য দিতে হয় লর্ড কার্জনকে তাঁর ভারতের গভর্ণর জেনারেল পদ থেকে অবসর নিতে যে অর্থ তিনি পেয়েছিলেন তার সমমূল্য৷ পিছিয়ে আসেননি এই ভারতের ঐতিহ্য প্রেমিক লর্ড কার্জন অবসরের বিনিময়ে যে টাকাটা পেয়েছিলেন নিঃশেষে তা দিয়ে ওই সাধের জিনিষ যথাযোগ্য মূল্যের বিনিময়ে কিনে ভারত বাসীর উদ্যেশ্যে তার ভালবাসার স্মৃতি উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দিয়ে এই দেশকে বিদায় জানিয়ে কায়রো থেকে লন্ডন গৃহাভিমুখে যাত্রা করেন ৷ প্রায় শত বর্ষধরে কার্জনের ওই অকৃত্তিম ভালবাসার দান অমাবস্যার রাতে তাজমহলকে জ্যোৎস্না রাতের মতো সুষমা মণ্ডিত করে রাখত৷ অবশেষে কয়েক বছর আগে এক ঝড়ের রাতে ভারতবাসীকে দেওয়া কার্জনের ওই ভালবাসার উপহার ভেঙে চূড়মার হয়েযায় বলে সংবাদে প্রকাশ৷
বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধুমাত্র পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্র থেকে উত্তোরন ঘটিয়ে বিদ্যা শিক্ষা প্রসারের কেন্দ্রে পরিণত করে ছিলেন কার্জন৷ মনেপ্রাণে খাঁটি ইউরোপীয়ান বিদ্যাসাগরের সান্নিধ্য না পেলেও কার্জন তাঁর সময়ের ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত স্যার আশুতোষকে ইউরোপীয় জনসাধারনের কাছে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরতে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিলেন নিজের দেশে৷
শুধু লর্ড কার্জনই নয় ৷ তাঁর অনুপ্রেরনায় লেডি কার্জন ধর্মতলায় করেছিলেন পার্ক, মহিলাদের সুষ্টু চিকিৎসার জন্য গড়ে তুলেছিলেন ইন্ডিয়ান নার্সিং সেন্টার বা ভারতীয় ধাত্রী বিদ্যা শিক্ষা কেন্দ্র৷
তথ্য সূত্রঃ
১. এনাসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা – ভল্যুম – ২,
২. A New Look at Modern Indian History Grover & Grover.
৩. Ideologies of the Raj: T R Metcalfe.
৪. The Musnud of Murshidabad- P.C. Majumder
৫. Speach of Lord Curzon, deliverd by him in the Asiatic Society Calcutta on the February 7, 1900. Collected by Dr. Sukumar Sarkar the formar Director General, National Archives of India from Simla Records File No. 54 of 1900-1901.
Musnud of Murshidabad

