বাডির দুর্গা পুজো


Posted on October 5, 2025 by Syamal Das

সমাজ বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সার্বজনিন পুজোয় রূপান্তরিত হচ্ছে৷

একটি প্রতিবেদন

আরও একটি বাডির দুর্গা পুজো সমাজ বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সার্বজনিন পুজোয় রূপান্তরিত হলো৷ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ির পুজো যেমন কমছে তেমনি যে বাড়িতে পুজো হতো সেই বাড়ির আসে পাশের বাসিন্দারা সংঘবদ্ধ হয়ে পাড়ার পুজো বা সার্বজনিন পুজোর সৃস্টি করেছে৷ কমতে থাকা বাড়ির পুজোর সংখ্যা সার্বজনিন পুজোর বাড় বাড়ন্ততে পুশিয়ে যায়৷ আবার একটি বাড়ির পুজো বন্ধ হলে যেমন আসেপাশের বাসিন্দারা সার্বজনিন পুজোর সৃস্টি করলেও ওই  সার্বজনিনও ভেঙে একাধিক সার্বজনিন পুজোর সৃস্টি হামেশায় দেখা যায়৷ এমনকি দেখাযায় একটি সার্বজনিন পুজো ভেঙে ঠিক তার পাশেই আর একটি সার্বজনিন পুজোর পত্তন হতে৷

বাড়ির পুজো বহুযুগ থেকে চলে এলেও তার বারবারন্ত হয় ১৭৯৩ সালের লর্ড কর্ণওয়ালিশের জমিদারী প্রথার ‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট’ প্রবর্তনের সময় থেকে৷ পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট সম্পর্কে ইতিহাস বলছে‘The Permanent Settlement, also known as the Zamindari System, was a land revenue system implemented by the British East India Company in 1793, primarily in Bengal, Bihar, and Orissa. Under this system, zamindars (landlords) were granted hereditary ownership of land and the right to collect rent from peasants, in exchange for a fixed, permanent tax payment to the British government. The goal was to stabilize revenue for the Company and encourage investment in land, though it often led to peasant exploitation and the creation of powerful landlord classes’ অস্টাদশ  শতাব্দির শেষ থেকেই  চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত নব্য হিন্দু জমিদারেরা যেমন বাড়িতে মন্দির স্থাপন করে বাড়িতে দুর্গা পুজোর আয়োজন করতে থাকেন তেমনি উনবিংশ  শতাব্দির প্রথম থেকেই  বাবু কালচারে অতিষ্ঠ  জমিদার নব্য বাবু পুত্রের বাবুয়ানায় ভবিষ্যতে যেন তাঁর জমিদারী লাটে উঠে না যায় সেদিকে লক্ষ রেখে প্রচুর জমি  বা জমিদারী দুর্গাদেবী বা কোন দেব ঠাকুরের নামে অর্পননামা দলিল করে তার  মাধ্যমে দেবত্তোর করে রেখে যান৷ ফলে জমিদার বা জোতদারের কোন আইনানুগ ওয়ারিশ দেবত্তোর সম্পত্তি  বিক্রি করে স্ফুর্তি করা থেকে বাধ্য হয়েই বিরত থেকে ওই  জমিদার নন্দনের দেবত্তোর সম্পত্তি থেকে  শুধু মাত্র দেবতার প্রসাদ গ্রহন ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না ৷ তাই পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টের পর নব্য জমিদারদের বাড়ির পুজোও একরকম চিরস্থায়ি হয়ে যায়৷ আর বাড়ির পুজো চিরস্থায়ী হয়ে যায় সেই সমস্ত পরিবারে যে সমস্ত জমিদার ও জোতদারেরা জমির উৎপাদনের ও জমিদারীর  লভ্যাংশ দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে এবং কেউ কেউ ওই বাণিজ্য পুঁজি জমিয়ে কল কারখানা করে বাড়িতে দুর্গাপুজো দেওয়া শুরু করেন৷ তবে বাড়িতে দুর্গাপুজোর বারবাড়ন্ত যে ১৭৯৩ সালের পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট পর থেকেই তা বলাই বাহুল্য৷ চিরস্থায়ি বন্দোবস্তের আগেও নবাবী আমলে জমিদারী বন্দোবস্ত ছিল তা পাঁচ সালা বা দশ সালা বন্দোবস্ত৷ সুবা বাংলা তথা ভারতবর্ষে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূচনা ওই বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আমলে৷ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আমলে নব্য জমিদারদের বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার বহু পূর্ব থেকেই  অনেক ভূস্বামীদের বাড়িতে দুর্গা পুজো বংশ পরম্পরায় হয়ে এসেছে৷ যেমন  কাশিমবাজারের নন্দী পরিবারের  দুর্গা পুজো হয়ে এসেছে ওই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ওয়রেন  হেস্টিংশের  আর্শিবাদ পুষ্ট কান্ত বাবুর সময় থেকে  অর্থাৎ পলাশির যুদ্ধের কয়েক বছর পর ওয়ারেন হেস্টিংস সুবা বাংলার (বাংলা বিহার ওড়িশা) গভর্নর জেনারেল  হোয়ে কান্তবাবুকে তাঁর দেওয়ান নিযুক্ত করলে হেস্টিংশের কল্যানে বেনিয়ান কান্ত মুদি ( মুদিখানার দ্রব্য বিক্রেতা ) কোম্পানীর কাছথেকে বর্তমান গাইবাঁধা ও কুড়িগ্রাম জেলা বা বাপারবন্দ পরগণা বন্দোবস্ত নিয়ে জমিদারী ব্যবসথার পত্তন করে বাড়ির পুজো শুরু করেন ৷  কাশিমবাজারের রায় পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদা প্রসাদ রায় মসলিন ও সিল্কের ব্যাবসা করে ধনি হয়ে জমিদারী কিনেছিলেন ওই  ‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট’ প্রবর্তনের আমলে৷ ওই  রাজ পরিবারে দুর্গাপুজোর সূচনা তখন থেকেই৷ এমনিই এক পুরনো ভূস্বামী পরিবার ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার পূর্বতন ভগবানগোলা বর্তমান রাণীতলা থানার অধীন হরিরামপুর– ছাতাই–এ৷ হরিরামপুর– ছাতাই এর জমিদার পরিবারের সর্বশেষ জমিদার ছিলেন অধুনা প্রয়াত পঞ্চানন দাস৷ ছাতাই মৌজার এখন যেটাকে পুরনো ছাতাই বলে সেখানেই প্রায় ১৫ একর জায়গা নিয়ে ছিল ছাতায়ের ওই জমিদার পরিবারের পৈত্রিক বাডি৷৷ ওই বাড়িটি ছিল ছিল আশীটি  ঘর নিয়ে ছিল বিশাল এক প্রাসাদ৷ ‘পুরাতন ছাতাইয়ের  দাসেদের ওই  জমিদার বাড়ীই ছিল এতদ অঞ্চলের দ্রষ্টব্য বস্তু৷ ছাতাই মৌজার ১১৫১, ১১৫৩, ১১৫৪, ১১৫৫, ১১৫৬, প্রভৃতি প্রায় ২৭টি দাগে প্রায় ৯ বিঘা জমির ওপর দাস বা  পোদ্দারদের ৮০ খানি ঘর ও ৬টি উঠান বিশিষ্ট একতলা সুউচ্চ পৈত্রিক বাড়ী৷ এই বাড়ীতে ছিল ৫টি সিঁড়ি ও ৪টি কূপ৷ এই বাড়ীর দক্ষিণে ১১৩২ দাগে ছিল ৫৭ শতকের  একটি প্রায় ১০০টি নারকেল গাছ বিশিষ্ট নারকেল বাগান৷ ঐ বাগানের দক্ষিণে ১১৩৬ দাগে ৬০ শতকের ডোবা, তার পশ্চিমে ২ একর ২৩ শতকের বৃহৎ পুকুর এবং ১.৩৯ একরের পুকুরপাড়৷ তার উত্তরে ১ একর ৭ শতকের বাঁশ বাগান, তার পূর্বে ৩১ শতকের গোয়াল বাড়ী৷ গোয়ালে ছিল প্রায় ৬০টি গরু৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন ঐ বাড়ীর ৬০ ইঞ্চি দেওয়ালের মধ্যে ছিল দেওয়ালে আর্চকরে আড়াই ফুটের গলিপথ৷ দেওয়ালের মধ্যের রাস্তা দিয়ে যাওয়া যেত গোটা বাড়ীর যে কোন ঘরে৷  গোয়ালবাডি বাড়িতে ছিল অর্ধশতাধিক গাই গরু৷ তার পাশে ছিল মোষ ও বলদের গোয়াল৷  গোয়ালের পাশে ছিল বিশাল লম্বা এক পুকুর নাম ‘ চাম গর্ত’৷ গরু মোষ বলদদের স্নানের পুকুর৷ নারকেল বাগানের শতাধিক নারকেলগাছ জমিদার বাডির পাল পার্বনে গরুর দুধের চাঁছি আর নারকলের চাঁই দিয়ে তৈরী নারকলের নারু ও মিষ্টান্নের নানা পদ তৈরী হতো পাল পার্বনে ও দৈনন্দিন খাওয়া দাওয়ায়৷ নারকেল বাগানের পরে ছিল আঁাঁতুর পকুব, ১১৩৬ দাগে  ৬০ শতকের রাঙ্গাগর্ত তারপর  বড পুকুর৷ বর্ষার সময় ঁতুর পুকুরে ছাডা হতো ভৈরবনদী থেকে নিয়ে আসা মাছের ডিম, মাস তিনেকের মধ্যেই ওই ডিম পরিণত হতো চাডা পোনায় চারাপোনা গুলি কে ধরে ছেডে দেওয়া হতো  ৬০ শতকের ওই ছোট পুকুর রাঙ্গাগর্তে ৷ সেখানে চারাপোনাগুলি আরও একটু বড হলেই সেগুলিকে ছেডে দেওয়া হতো বড পুকুরে৷ বড পুকুরের মাছ পাঁচ সাত বা দশ  সের ওজনের না হওয়া পর্যন্ত ধরা হতো না৷ বড পুকুরে মাছ থাকত রুই কাতলা মৃগেল আর চিতল৷ সেখানে বড বড মাছেদের সঙ্গে বাস করত চার পাঁচ হাত লম্বা ছোট ছোট মেছো কুমির৷ মেছো কুমির যেমন ছোট মাছ ধরেখেত তেমনি ওরা ছিল বড় পুকুরে বড় সাছদের পাহারাদার ৷ মাছ ও কুমিরের সহ অবস্থান থাকায় কুমিরের ভয়ে চোরেরা  মাছ চুরি করতে ভয় পেত ৷ ওই পরিবারের সর্বশেষ জমিদার পঞ্চানন দাসের ছোট্ট এক বোন ওই পুকুরে খেলাপাতির বাসন ধুতে গেলে পুকুরের মেছো কুমির বাচ্চাটিকে  জলে টেনে নিয়ে গেলে কুমিরের কামরে বাচ্চাটির মৃত্যু হয়৷ ছাতায়ের ওই বড়পুকুর থেকে শিকার করা মৃত কুমিরের মমি এখনও রয়েছে মনিপুরি নৃত্যর জন্মদাতা জিয়াগঞ্জের বড় গোবিন্দ বাড়ির প্রবেশ পথে৷ বড পুকুরের চারিদিকে ছিল চওডা পাড৷ পূব পাডে ছিল সারি সারি জামরুল খেজুর ও জাম  গাছ৷ ফল ধরতো অসংখ্য৷ গ্রীষ্মের দাব দাহের সময় জামগাছের বড বড ডাল অসংখ্য জামের ভাডে নুয়ে পডত জলে৷ রাখাল বালকেরা গরু চডাতে চডাতে গাছের গোডায় ও জলে পডা জাম কুডিয়ে খেত আর খেত আঁচল ভরে পুকুরের স্বচ্ছ জল৷ খেজুর আর জামরুল পাকত দেরীতে৷ পুকুরের পশ্চিমপাডে ছিল তালগাছের সারি৷ তাল পাকত অনেক দেরীতে৷ ভাদ্র মাসের শেষে৷

সমাজ বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় দেশের শত শত বাডির পুজো হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে নয়তো বন্ধ হতে বসেছে সে জায়গায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বারোয়ারী বা সার্বোজনীন দুর্গা পুজো৷ ‘ হাঁ এটা গণতন্ত্র তো বটেই এমনকি সামন্ততন্ত্র বিলুপ্তরও সুস্পস্ট  লক্ষণ’  বলছিলেন একজন অশিতীপর প্রাক্তন রাজনৈতিক কর্মী৷ জমিদারী অধিগ্রহণ আইন ১৯৫৩ সালে পাশ হওয়ার অব্যবহিত পূর্বেও যখন বাদুর বাগানের বটতলায় আড্ডামারা বারো ইয়ারীর দল যারা আড়ালে আবডালে বিদ্যাসাগর মাইকেলের মাথায় চাটি মারত  আমোদ করতে তারা হাতে গোনা দু একটা পুজো করার মধ্যেই  সীমাবদ্ধ ছিল৷  জমিদারী চলেগেলে রাজার রাজ্যপাট অবলুপ্ত হলে দুর্গা ঠাকুর আর বাডির মধ্যে আটকে ( এরেস্ট হয়ে ) থাকেননি ৷ জমিদার বাডি বা রাজবাডীর আসে পাশের অধিকাংশ মধ্য বিত্ত বাসিন্দারা ওই বারোইয়ারিদের সঙ্গে মিলে মিসে বা দেরই আদলে প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন একেরপর এক সার্বজনীন দুর্গাপুজা ৷ একেই জাতীয় উৎসবের তকমা লাগিয়ে ভোট পাওয়ার লালসায় ইদানিং বিপুল পরিমান সরকারী অনুদান মিলছে ৷ অধিকাংশ  সার্বজনিন পুজো সামন্ত সংস্কৃতিতে পুজোর স্বাত্তিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে উৎসবে মাতোয়ারা হয়েচ্ছেন৷ এখন বাডির পুজো কোটিতে গুটি৷ কাশিমবাজারের নন্দী পরিবার জমিদারীর মধ্যেই আটকে থাকেননি তাঁরা বিহারের বর্তমান ঝাড় খন্ডের রাজগাঁও এ স্থাপন করে ছিলেন বোল্ডার ও চাইনিজ ক্লের খনি ও কারখানা৷ অবস্থা পরে যায়নি তবুও জমিদারী অধিগ্রহণ ও মধ্য স্বত্ত্ব বিলোপের সংবাদ পেয়ে সেইযে রাজা দরবারের সিংহাসন থেকে নেমে এলেন সদ্য রাজত্বের উত্তরাধিকারী  তৎকালীন রাজকুমার তারপর আর কাশিমবাজার (বড়) রাজবাড়ির পুজো আর কনটিনিউ করেনি ৷ অন্যদিকে ওই কশিমবাজারের রায় পরিবারের রাজারা ১৯৫৩ সালে জমিদারী অধিগ্রহণের পর মাঝের কয়েক বছর মৃয়মান হয়ে পরলেও বর্তমান কুমার বাহাদুর ও তাঁর পরিবারের চেস্টায় ব্যাবসা বানিজ্য করে আবার ওঁরা উঠে দাঁড়িয়েছেন ৷ ঐতিহ্যবাহী বাড়ীর পুজোর সেই ট্র্যাডিশন এখন ওই পরিবারে  সমানে চলেছে৷ এরকমই  জমিদার বাডি ছিল ছাতাই হরিরামপুরের ওই  দাস পরিবারের৷ ওই জমিদার বাডিকে বলা হত পোদ্দারদের বাডি৷ জমিদারির সঙ্গে পোদ্দারদের ছিল কাঁসা পিতল ও তেজারতির ব্যবসা ও আবির তৈরির কারখানা৷ ঐ আবির যেত এমনকি নিকটস্ত  ভগবান গোলা বন্দর দিয়ে বিদেশেও৷ এই পোদ্দার বাডিতেই হয়ে এসেছে পঁচশো বছর ধরে পারিবারিক দুর্গা পুজো৷ সামন্ততান্ত্রর ভাঙ্গনের যুগে পোদ্দারবাডির ঐ পুজো বন্ধ হয়ে যায়৷ পোদ্দাররা৷ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে বসবাস করতে চলে যান  সদর শহর বহরমপুরে৷  পুরনো নস্টালজিয়াই ভুগতে থাকা ঐ বংশের কনিষ্ট এক  জমিদারপুত্র শহরের ছোট্ট বাডিটার তিন তলার ছাদে বরনগডের রানী ভবানীর চার চালা মন্দিরের আদলে নির্মান করেন বালি সিমেন্ট পাথর দিয়ে ছোট্ট এক মন্দির ৷ সেখানে– ই বিগত প্রায় বিশ  বছর ধরে হয়ে এসেছে ছাতায়ের পোদ্দারবাডির ঐ পারিবারিক পুজো৷ এ বছর কিন্তু ঐ পারিবারিক পুজোর ব্যায়ভার সামলাতে পারলেন না ওই  পরন্ত অবস্থার জমিদার পুত্র ৷ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন পুজো বন্ধের৷ ঠিক সেই  সময়েই  ছাতাই বারয়ারী উৎসব কমিটির ভজন দাস, দীলিপ সাহা, মাধব সাহারা  এসে  ছোট বাবুর কছে ওদেরই পরিবারের পরে থাকা কিছুটা জমি৷সেখানে ওরা দুর্গা মন্দির বানাবেন এই পরিবারেরই সর্বশেষ প্রয়াত জমিদার পঞ্চানন দাসের নামে পুজোতে সংকল্পও হবে এই পরিবারে নামে৷ সাধু ওই  প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ওই দাস পরিবার একটি ড্রাস্ট করে তাদের প্রায় দু কাঠা জমিতে পরিবারের নামে মন্দির করতে অনুমতি দিলে বারোয়ারি উৎসব কমিটির সঙ্গে মিলে পোদ্দার বাডির পারিবারিক পুজো ‘ পঞ্চানন দাস হীরন্ময়ী দেবী স্মৃতি দুর্গা মন্দিরে শাস্ত্র মেনে সুচারু রূপে দুর্গা পুজো সম্পন্ন হলো ৷ সার্বজনিন পুজোতে পরিণত হয়েগেল বাড়ির একটি পুজো৷ সামন্ততন্ত্র ভাঙ্গনের যুগে এই ভাবেই সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি সার্বজনিনতার রূপ পেলো৷

সামন্ততন্ত্র অবলুপ্তির কফিনে শেষ পেরেকটি কিন্তু গেঁথে দিয়েছে রাজনীতি৷ রাজনীতি কি? কাকে বলে রাজনীতি? ওই অশিতীপর প্রাক্তন রাজৌনতিক কর্মী ভদ্রলোক বললেন, সোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া ( কমিউনিস্ট) এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, তৎকালের ছাত্র নেতা প্রভাষ ঘোষ ওই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কসবাদী দার্শনিক শিবদাস ঘোসের শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে রাজনীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ তো করে দিয়েছেন সেই  ১৯৬৬৫ সালে প্রকাশিত ‘ শিক্ষা সংস্কৃতি ও নৈতিকতার সঙ্কট প্রসঙ্গে‘ নামক পুস্তিকায়৷ প্রভাষ বাবু  বলেছেন ’সমাজ ব্যবস্থা কেমন ভাবে চলবে সেটাই হল রাজনীতি’৷  এ দেশটা কেমন ভাবে চলবে সেটা কিন্তু ভাবতে শুরু করে ছিলেন ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে রাজনীতিকরা৷ তাই সংবিধান প্রস্তুতি কমিটির সভায় তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এ কে গোপালন বলে ছিলেন, এক এক জনের শত শত হাজার হাজার বিঘা জমি রাখা যাবে না৷ প্রত্যেকটি পরিবারের থাকবে পনের বিঘা করে জমি৷ বন্ধুর ইচ্ছার মান্যতা দিয়ে ছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু৷ স্বাধীনতার দশ মাস কাটতে না কাটতে নেহেরুজি সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এনে রায়তের বর্ধিত জমি নিয়ে নেওয়ার  প্রক্রিয়াকে বিচার বিভাগের আওতার বাইরে নিয়ে এলে  কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের দুশো চুরাশিটা আইন হয়ে একযোগে সামন্ততন্ত্রর অবলুপ্তি ঘটানোর  প্রয়াস পেল৷ পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৫৩ সালে দি ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট একুইজিসান এ্যাক্ট ও ১৯৫৫ সালের দি ওয়েস্ট বেঙ্গল  ল্যান্ড রিফর্ম এ্যাক্ট প্রণয়নের পর পরই৷ এই আইন দুটিই সামন্ততন্ত্রর  কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে৷ আর এতে অবসান ঘটতে চলেছে  সামন্তি সংস্কৃতির৷ তাই ভেঙ্গে পডছে পুরনো স্থাপত্য, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ভারত নাট্যম, ধ্রুপদি সঙ্গীত, উঁচুতারে বাঁধা সামন্ত যুগিও আর্ট, লিটারেচার কালচার৷ আবার ( তথাকথিত  মার্কসীয়  রাজনীতির ভাষায় ‘‘পচা গলা ঐ সামন্তি সংস্কৃতির’ বিকল্প উন্নত সংস্কৃতিও কিন্তু ওরা সৃষ্টি করতে পারেননি) সামন্তি সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটালে উচ্চ মার্গের সামন্তি সংস্কৃতির অবসানের প্রক্রিয়ায়  শূণ্য হওয়া স্থান পরে থাকতে পারেনা ৷ সে জায়গায় স্থান পেতে বসেছে আমেরিকার  ইয়াংকি কালচারের অপভ্রংশ  সার্বজনিন  ডি জে বা (ডিকস জকি ‘‘Disc Jockey’’ )৷

অনেকানেক  সার্বজনিনে তাই ডি জের দাপটে ‘হারু ডোমের শানাই  আজ  অহরহ খুন হচ্ছে’৷

সঙ্গের ছবি দুটি ছাতাই– জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেসের একাংশ ৷ এই বাড়িতেই পাঁচশো বছর ধরে হয়ে এসেছে পারিবারিক বাড়ির দুর্গাপুজো৷

পরিবারের দানে ছাতাই বারোয়ারী উৎসব কমিটির পরিচালনায় ‘ পঞ্চানন দাস –হীরন্ময়ী দেবী স্মৃতি মন্দিরে  সার্বজনিনের সঙ্গে পারিবারিক পুজো একাকার হয়ে দুর্গা প্রতিমা৷


Bengali Culture Durga Puja Festival

Culture

0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Itihas Parikrama